পঞ্চগড়ের মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ বালুর ব্যবসা
পঞ্চগড় প্রতিনিধি খাদেমুল ইসলাম!
পঞ্চগড় মহাসড়ক দখল করে বালুর ব্যবসা মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ বালুর ব্যবসা। তেতুলিয়া বাংলাবান্ধা মহাসড়কের দু’পাশ জুড়ে দখল করে ইচ্ছেমতো বালু ফেলে তারা জমজমাট ব্যবসা করলেও আর এই অবৈধভাবে বালুর ব্যবসার খেসারত দিচ্ছে মহাসড়কে চলাচলরত পথচারী, যাত্রী ও যানবাহন চালকরা।
মহাসড়কের পাশে ,তেতুলিয়া, রনচন্ডি বাজার, ভাদ্র বাড়ি, ইসলামপুর, তিরনই বাজার, বাংলা বান্ধা সহ কয়েকটি স্থান দখল করে বালুর ব্যবসা করে আসছে একটি প্রভাবশালী মহল। ট্রাকে করে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে মহাসড়কের পাশে। এতে বালু ছড়িয়ে পথচারীদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে সড়কে ওঠে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ-তিনগুণ বালু ট্রাকে বহন করায় নানা স্থানে পাকা সড়কের পাশ দেবে নতুবা ভেঙে যাচ্ছে। ব্যস্ত সড়কের পাশে বালুর ব্যবসা করার অনুমতি না থাকলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ প্রশাসনের চোখের সামনে প্রকাশ্যে চলছে এই ব্যবসা। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে অবৈধ এই ব্যবসার পরিধি। ফলে একদিকে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে পথচারী, গাড়ি চালক ও মহাসড়কের পাশের ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে বাতাসে বালু উড়ে নষ্ট হচ্ছে হোটেলের খাবার, দোকানের মালামাল ধুলো বালিতে একাকার হয়ে যাচ্ছে। ধুলো বালিতে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই ছোট-বড় দুর্ঘটনায় পরছে বিভিন্ন যানবাহন। সড়ক-মহাসড়কের পাশে কিংবা ব্যক্তিগত জমির ওপর এসব ব্যবসা গড়ে তোলা হলেও প্রশাসন কিংবা পরিবেশ অধিদফতর থেকে নেয়া হয়নি কোনো ধরনের অনুমতিপত্র।
মহাসড়কে এভাবে বালু লোড আনলোড করছেন শ্রমিকেরা। মহাসড়কের পাশে মিল, কারখানা, ইন্ডাস্ট্রিজ গড়ে ওঠাকে কেন্দ্র করে চলাচল বেড়েছে বালু বোঝাই গাড়ির। খোলাভাবে বালু বহন করায় বাতাসে উড়ছে ধুলোবালি। এতে করে সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের চোখে মুখে ঢুকে পড়ে বালু। তাছাড়া রাস্তার পাশে বালু, পাথর ও গাছ থাকায় গাড়ি ওভারটেক করতে গিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এমনকি দুর্ঘটনায় প্রাণও হারাচ্ছে মানুষ। পঞ্চগড় তেতুলিয়া বুড়া-বুড়ি ভজনপুর, দেবনগড় মহাসড়কের পাশে রনচন্ডি উচ্চ বিদ্যালয় এবং তেতুলিয়া কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা
উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, সড়কের পাশে বালু ব্যবসায় গড়ে তোলায় আমাদের স্কুলে যাওয়া আসার পথে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বাতাসে বালু উড়ে আমাদের চোখে মুখে যায়। এতে করে আমরা সর্দি-কাশিসহ নানা শ্বাসজনিত রোগে ভুগতে হচ্ছে। আমরা সড়কের পাশে অবৈধ এই বালু ব্যবসা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। প্রশাসনের ভূমিকা না থাকায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে অবৈধ এই ব্যবসা। বাতাসে ধুলোবালি উড়ে গাড়ি চালক ও পথচারীদের চোখে পড়ায় সড়কের দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। এ ছাড়া ধুলোবালি উড়ে চালকদের চোখে পড়ার কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান পথচারী ও চালকেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পঞ্চগড়
মহাসড়কের দু’পাশ জুড়ে চলছে জমজমাট বালুর ব্যবসা। মহাসড়ক পাশে কয়েকটি স্থান দখল করে বালুর ব্যবসা করে আসছে একটি প্রভাবশালী মহল। এরমধ্য দিয়েই বড় যানগুলো স্বাভাবিক গতিতে ছুটলেও মোটরসাইকেল ও ছোট গাড়ির মতো হালকা যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। আর এই অবৈধভাবে বালুর ব্যবসার খেসারত দিচ্ছে মহাসড়কে চলাচলরত পথচারী, যাত্রী ও যানবাহন চালকরা। বাংলাবান্ধা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক তেতুলিয়া এলাকার বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম, যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক মোহাম্মদ রনি নিয়াজি, দৈনিক ইনকিলাব সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম
। প্রতিদিন সকাল ৮টার দিকে মোটরসাইকেলে করে বের হই। মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে সাদা বালু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। গত মাসে ভজনপুর বাজার পাড় হয়ে কিছুদূরে এগুতে চাকা বালুতে স্লিপ খেয়ে উল্টে আহত হই। সেদিন মারাও যেতে পারতাম। তিনি বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঝেমধ্যে দু’একটি অভিযান চালিয়ে ট্রাকের চালকদের ২ থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে বালু সরাতে বলে। ওই মুহূর্তে বালু সরালেও অভিযান শেষে আবারও শুরু হয় রমরমা ব্যবসা।
কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী জানান, এসব বালু পঞ্চগড় জেলা করতোয়া নদী
কিংবা তেতুলিয়া মহানন্দা নদী
থেকে আনা হয়। ওইখান থেকে প্রতিদিন হাজার ট্রাক বালু বিক্রি হয়। ওই বালু ট্রাকচালকরা ক্রেতার চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে নিয়ে আসেন। গন্তব্যে যাওয়ার পথে অতিরিক্ত বালু মহাড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে রেখে যান। এভাবে মহাসড়কের পাশে বালুর স্তূপ করা হয়। পরে সেখান থেকে বালু বিক্রি করা হয়। মূলত ট্রাকচালক ও মালিকরা এ ব্যবসা করছেন। তবে মহাসড়কের কিছু অংশে বালু রাখতে গেলে মাঝেমধ্যে স্থানীয় নেতাদের বাধার মুখেও পড়তে হয়। তাদের কিছু চাঁদা দিয়ে বালু ফেলতে হয়।তেতুলিয়া সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহীন
বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় মহাসড়ক দখল করা হচ্ছে। মহাসড়কে বালু ফেলা বন্ধ করা যাচ্ছে না, এটি দুঃখজনক। জনস্বার্থে অবৈধ বালু ব্যবসা দ্রুত বন্ধ করা উচিত।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) প্রকৌশলী মাহমুদ সুলতান
বলেন, অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা চার লেনের মহাসড়কটিতে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সড়কে ওভারলোড গাড়ির চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা অব্যাহত আছে। অনেক সময় পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মহাসড়ক দখলমুক্ত হবে। এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশের পূর্বাঞ্চলীয় এডিশনাল ডিআইজি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা এদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।