
বাইসাইকেলে-ই কাল হলো শিশু আনাসের! হত্যার পর লাশ ফেলে দেওয়া হয় বিলে।
মোঃসুলতান মাহমুদ ,গাজীপুর প্রতিনিধি।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের চিনাশুকানিয়ে গ্রাম থেকে নিখোঁজ হওয়ার ৭২ ঘণ্টা পর আনাস খান নামের এক শিশুর নিথর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১০ নভেম্বর) দুপুরের দিকে ওই গ্রামের মধ্যপাড়া নতুন বাজার এলাকার বাঙ্গাল বিল থেকে ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে। এরআগে,৭ নভেম্বর সকাল ৮টায় বাইসাইকেল নিয়ে খেলতে বেরিয়েছিল শিশু আনাস। এই মর্মান্তিক ঘটনায় ২জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নিহত শিশু আনাস (৫) গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজবাড়ি ইউনিয়নের চিনাশুকানিয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী আল আমিনের ছেলে। সে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিশু শ্রেণীতে পড়তো।
এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে স্থানীয় বোরহান উদ্দিনের বাড়ির কেয়ার্টেকার ও তার স্ত্রীকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
আটকরা হলো, কেয়ারটেকার মো. নজরুল ইসলাম (৫০) ও তার স্ত্রী শাহিনুর (৪০)।
নিহতের স্বজনদের বরাত দিয়ে স্থানীয় রেজাউল করিম জানান, গত শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে বাইসাইকেল নিয়ে দাদার বাড়ি থেকে খেলতে বের হয় আনাস। ২ ঘণ্টা পরও সে বাড়িতে না ফেরায় স্বজনেরা খোঁজা খুঁজি শুরু করেন। সকাল ১০টার দিকে প্রতিবেশীর বাড়ির উঠানে আনাসের বাইসাইকেলটি পাওয়া গেলেও তার কোনো খোঁজ মেলেনি। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে শিশুর দাদা হাসেন আলী খান শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডির সুত্র ধরে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম কাজ শুরু করেন। রোববার রাতে ওই ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পাশের বোরহান উদ্দিনের বাড়ির কেয়ার্টেকার ও তার স্ত্রীকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের জিজ্ঞেসাবাদে শিশু হত্যার কথা নিশ্চিত হয়ে তাদেরকেসহ সোমবার সকালের দিকে ঘটনাস্থলে আসে ডিবি পুলিশ। এসময় আটকদের দেওয়া তথ্যমতে বাড়ির পাশের একটি ডাস্টবিনে লাশ রয়েছে মর্মে স্বীকারোক্তি দেয়। সেখানে কিছু সময় খুঁজতে থাকার একপর্যায়ে ওই বিলের মধ্যে লাশ ফেলার কথা স্বীকার করে নজরুল ইসলাম। পরে তার দেখানো স্থান থেকে আনাসের নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতের দাদা বলেন, ‘খেলতে গিয়ে আমার নাতি নিখোঁজ হয়। আমরা সব জায়গায় খোঁজি। তাকে পাইনাই। খবর পেয়ে প্রবাস থেকে তার বাবা চলে এসেছে। ৪ দিন পর পুলিশ বিল থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে। এইটুকু নাতিরে খুনিরা কি কারণে মেরেছে। আমি দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি চাই।’
গাজীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (কালিয়াকৈর সার্কেল) মেরাজুল ইসলাম বলেন,’বিল থেকে ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুরের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মামলাটি এখন জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দেখছে। মরদেহ উদ্ধারের আগে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম, তার স্ত্রী এবং আরও এক প্রতিবেশীকে হেফাজতে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই পুলিশ তদন্ত করছে।’
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম আকাশ বাংলাকে বলেন,’ ঘটনা অবগত হয়ে গতকাল রাতে সন্দেহজনক ওই দুইজনকে আটক করে সারারাত জিজ্ঞেসাবাদ করলে শিশুর লাশের সন্ধান দেয় তারা। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিশুর বাইসাইকেল চালানোর দ্বন্দ্বে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। আমরা বিষয়টি আরও তদন্ত করছি। এ ঘটনার সাথে অন্য কিছু রহস্য থাকতে পারে। তদন্ত শেষ না হওয়ার আগে প্রকৃত ঘটনা বলা মুশকিল।’