ওসমানীনগরে বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ ঐতিহ্য ও হস্তশিল্প
শরীফ আহমদ চৌধুরী ওসমানীনগর (সিলেট) প্রতিনিধি::
কালের পরিক্রমায় ও আধুনিকতার দাপটে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প ও কৃষি-নির্ভর উপকরণগুলো আজ বিলুপ্তির মুখে। একসময় প্রতিটি বাড়ির অবিচ্ছেদ্য অংশ এসব সামগ্রী ছিল স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক। বর্তমানে গ্রামীণ জীবনের পরিবর্তিত চিত্রে এগুলো কেবলই স্মৃতির পাতায় ঠাঁই পাচ্ছে।
যন্ত্রের দাপটে ঐতিহ্যবাহী উপকরণ বিলীন:
কৃষিকাজে আধুনিক ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের এক সময়ের সঙ্গী লাঙল, বলদ ও জোয়াল আজ প্রায় অদৃশ্য। একইভাবে, রাতের আঁধার দূর করার ভরসা হারিকেন, কুপি ও কুইন লাইট এখন এলইডি ও সোলার লাইটের যুগে কেবল সংগ্রহশালার প্রদর্শন সামগ্রী।
হস্তশিল্প ও মৃৎশিল্পের করুণ দশা:
বাঁশ-বেত ও তালের পাতার তৈরি ছাতা, চালুনি, খাঁচা, ডালি, মই-এর মতো হরেক রকমের হস্তশিল্পের কদর কমিয়েছে প্লাস্টিক ও ধাতব সামগ্রীর সহজলভ্যতা। এর ফলে গ্রামীণ কারিগর ও শিল্পীরা জীবিকা হারাচ্ছেন।
অন্যদিকে, মাটির কলস, হাঁড়ি-পাতিল, ঘড়া ও চুলা-এর জায়গা দখল করেছে অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের আধুনিক সামগ্রী। এতে কুমারদের ঐতিহ্যবাহী শিল্প চরম সংকটে পড়েছে, এবং অনেক পরিবার পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে।
ঐতিহ্য রক্ষায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
স্থানীয় প্রবীণদের মতে, এই নিজস্ব পণ্য ও শিল্পগুলো ওসমানীনগরের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও শিকড়ের পরিচায়ক। এর অবলুপ্তি একটি জনগোষ্ঠীর লোকজ ঐতিহ্যকে মুছে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা এই বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্য রক্ষায় বহুমাত্রিক উদ্যোগের ওপর জোর দিচ্ছেন। তাদের পরামর্শে রয়েছে— শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লোকজ সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, গ্রামীণ হেরিটেজ কর্নার ও মিউজিয়াম গড়ে তোলা, এবং সরকারি-বেসরকারি গবেষণা ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান।
উন্নত বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ একটি শক্তিশালী ভিত্তি হতে পারে। এজন্য ওসমানীনগরের এই হারিয়ে যাওয়া পেশা ও শিল্পকে নথিভুক্ত করে একটি বাস্তবমুখী পুনর্জাগরণ পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। সচেতনতা, সংরক্ষণ এবং সৃজনশীল উদ্যোগের মাধ্যমেই রক্ষা করা সম্ভব সংস্কৃতির এই শিকড়কে,