৫৯ বিজিবি ব্যাটলিয়নের বিরুদ্ধে গণঅধিকার পরিষদ নেতার ৮ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ
মাহিদুল ইসলাম ফরহাদ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি,
গণঅধিকার পরিষদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির সিফতির ব্যাগ থেকে নগদ ৮ লাখ টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে মহানন্দা ৫৯ বিজিবি ব্যাটলিয়নে বিরুদ্ধে। এমনকি ব্যাটলিয়ন ক্যাম্পে এই নেতাকে ডেকে ভয়ভীতি ও মামলার হুমকি দেয়ার অভিযোগ ৫৯ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন গণঅধিকার পরিষদ নেতা আলমগীর কবির সিফতি।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আলমগীর কবির সিফতি বলেন, আমি আগেরদিন একটি জমি বিক্রি করেছিলাম। ঘটনার দিন (বৃহস্পতিবার) আমার একটি দেনার টাকা শোধ করে বাকি ৮ লাখ টাকা ব্যাগের মধ্যে নিয়ে ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলাম। পথে কানসাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে ৪ জন বিজিবি সদস্য আমার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এসময় তারা ব্যাগে কি আছে জানতে চেয়ে, সেটি আমার কাছ থেকে নিয়ে নেয়। এরপরই বিজিবি সদস্যরা ব্যাগ নিয়ে দুটি মটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, তাদের পেছনে কিছু দূর যাওয়ার পর আমি ফিরে আসি। এসেই ফেসবুক লাইভে ঘটনার বিবরণ দেয়। আমার ব্যাগে দুটি মোবাইল ছিল ও ব্যাগের ভেতরে টিসু ব্যাগে মোড়ানো ৮টি বান্ডিলে ৮ লাখ টাকা ছিল। এ ঘটনায় পরবর্তীতে শিবগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি, এর ন্যায়বিচার পাব। বিজিবি আমার সাথে অন্যায় করেছে।
গণঅধিকার পরিষদ নেতা আলমগীর বলেন, ঘটনার দিন ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক ব্যাটলিয়ন ক্যাম্পে ডেকে ঘটনার পর করা ফেসবুক লাইভ ডিলেট করতে চাপ দেয়। এমনকি ৮ লাখ টাকার অভিযোগ না তোলার শর্তে আমাকে ২৪টি ভারতীয় মোবাইল দেয়ার প্রস্তাব দেয়। এছাড়াও আমার সন্তানকে বিজিবি পরিচালিত স্কুলে বিনামূল্যে ১০ বছর পড়ার সুযোগ দেয়ার কথা জানায়। কিন্তু আমি তাতে রাজি না হয়ে টাকার দাবি করলে ভয়ভীতি ও হুমকি দেয় বিজিবির সিও গোলাম কিবরিয়া।
তিনি আরও বলেন, বিজিবির এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করায় বর্তমানে আমি আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। যেকোন সময় আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে একটা ডিবি হারুনের মতো নির্যাতন ও সাজানো মামলা দিয়ে ফাঁসাতে পারে। আমি রাষ্ট্রের কাছে আমার ও পরিবারের নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি।
আলমগীর কবির বলেন, নিয়ম ভেঙে দীর্ঘদিন ধরে একই কর্মস্থলে রয়েছেন দূর্নীতিবাজ, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের আর্শিবাদপুষ্ট ৫৯ বিজিবির সিও গোলাম কিবরিয়া। তিনি এখানে যোগদানের পর থেকেই অশান্তিতে রয়েছেন সীমান্তের বাসিন্দারা। বিভিন্ন সময়ে সহজ নিরীহ ছাত্র, তরুণ যুবকদের জোরপূর্বক তুলে আনার বিপুল পরিমাণ মাদক ও অস্ত্র উদ্বার দেখিয়ে মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত গণঅধিকার পরিষদ জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলামিন আলী বলেন, বিজিবির এই অপকর্মের বিরুদ্ধে আমরা থানায় অভিযোগ দিয়েছি। বারবার বিজিবির সিও ও ক্যাম্প কমান্ডারকে অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হয়নি। এনিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ দিব। প্রয়োজনে দূর্নীতিবাজ বিজিবি কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।
তিনি আরও বলেন, নিজের পদোন্নতির জন্য বিপুল পরিমাণ মাদক, হেরোইন, ফেনসিডিলসহ বিদেশী অস্ত্র উদ্বার দেখালেও অপরাধীদের মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিমেয়ে ছেড়ে দেন। সীমান্তের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের কার্যক্রম বিনা বাধায় চালিয়ে গেলেও এতে তার কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। এমনকি ২০২৪ সালের ০৫ আগস্টের দিন ও পরবর্তীতে স্বৈরাচার আ.লীগের বিভিন্ন মন্ত্রী ও এমপিদের ব্যাটলিয়ন ক্যাম্পে আশ্রয় দেন ৫৯ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া। জানা যায়, মোটা অঙ্কের বিনিময়ে তাদের অনেককেই সীমান্ত পার করে ভারতে প্রবেশের সুযোগ করে দেন এই বিজিবি কর্মকর্তা।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি, আলমগীর কবির শিফতির স্ত্রী, পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও গণঅধিকার পরিষদের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া। মুঠোফোনে তিনি জানান, আলমগীর কবিরের অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিক্তিহীন। বিজিবির মান ক্ষুন্ন করতেই উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার নিয়মিত তল্লাসী কার্যক্রমের সময় বিজিবি সদস্যদের কাছে ব্যাগ ফেলেই সে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে জনসম্মুখে তার ব্যাগ তল্লাশী করে ২৪টি অবৈধ ভারতীয় মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয় এবং তা শিবগঞ্জ থানায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পর হস্তান্তর করা হয়েছে।
সচেতন নাগরিক ও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজনদের দাবি, সীমান্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এমন দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে দ্রুত অপসারণ করতে হবে। কারন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও মাদক আমদানির পেছনে সরাসরি হাত রয়েছে লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়ার। স্বৈরাচারের এই দোসরকে অবিলম্বে প্রত্যাহার ও চাকুরিচ্যুত করে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি সচেতন নাগরিকদের।