পা ভাঙ্গার প্রতিজ্ঞা, গণধোলাইয়ের ইশারা, শ্রীপুরের রহস্যময় রাস্তা এবং এক সাংবাদিকের আতঙ্ক
মোঃসুলতান মাহমুদ, গাজীপুর প্রতিনিধি।
গাজীপুরের শ্রীপুর। এক নিয়মহীন রাস্তার জন্মবৃত্তান্ত! আর সেই জন্মকথার গভীরে আলোর রেখা খুঁজতে গিয়েই এক সংবাদকর্মীর দিকে উড়ে এসেছে এক হিমশীতল হুমকি।
পথটি নির্মিত হচ্ছিল গাজীপুর ইউনিয়নের নছুর পুকুর এলাকায়। সরকারি অর্থায়নে তৈরি হচ্ছে রাস্তা, অথচ অভিযোগ রাস্তাটি নাকি এক বিশেষ ব্যক্তির বাড়ির সুবিধা দিতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এই নির্মাণকাজের কেন্দ্রে রয়েছেন এক ইউপি সদস্য এবং স্থানীয় বিএনপি নেতা, যার নাম মো. নুরে আলম (৫০)।
সন্দেহের ডালপালা যখন ছড়াচ্ছে, ঠিক তখনই সেখানে যান এটিএন নিউজের শ্রীপুর উপজেলা প্রতিনিধি শিহাব খান।
তিনি তথ্য সংগ্রহ করে ফিরলেন কিন্তু পথ যেন তাঁকে ছাড়ল না। সোমবার, বেলা ১টা ১৯ মিনিটে, তাঁর মুঠোফোনে ভেসে আসে এক অশনি সংকেত।
কলের অপর প্রান্তে ছিলেন সেই ইউপি সদস্য নুরে আলম। অডিও রেকর্ডে তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল ক্রোধে প্রকম্পিত, যেখানে শব্দগুলি ছিল আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতো। তাঁর ভাষ্য এই এলাকায় ঢুকলে ঠেঙের নালা ভাইঙ্গালাম… বাইরাইয়া ঠ্যাং ভাইঙ্গালাম। যেন তিনি আইনের ঊর্ধ্বে থাকা এক ক্ষমতাধর ব্যক্তি।
রহস্য আরও ঘনীভূত হয় যখন কথোপকথনে যুক্ত হন তাঁর ছেলে, কাজল (২৮)। দু’জনের দ্বৈত কণ্ঠে উচ্চারিত হয় চরমতম হুমকি। প্রশ্ন হলো: রাস্তার অনিয়ম এত গভীরে যে, তার সংবাদ সংগ্রহে গেলেই পা ভাঙ্গা এবং গণধোলাইয়ের মতো নির্মম শাস্তি পেতে হবে? এই হুমকি কি শুধু একটি রাস্তার অনিয়ম ঢাকার জন্য, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে আরও বিরাট কোনো ষড়যন্ত্র? বর্তমানে সাংবাদিক শিহাব খান এই ঘটনায় শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। থানা কর্তৃপক্ষ (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহম্মদ আবদুল বারিক) আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়: ক্ষমতা, নাকি ভয়—কোনটা এই হুমকির প্রধান উৎস? নুরে আলমের দাবি, তিনি গালাগাল করেননি, কথা-কাটাকাটি হয়েছে। কিন্তু রেকর্ডের সেই ভয়াবহ শব্দমালা কি কেবলই কথা-কাটাকাটি?
শ্রীপুরের এই নিয়মহীন রাস্তার রহস্যময় কাহিনি কি শেষ পর্যন্ত উন্মোচিত হবে? নাকি, পা ভাঙ্গার এই হুমকি চাপা দিয়ে দেবে সব সত্য?