ত্রিশালে ফেসবুক ফাঁদে ডাক্তার অপহরণ-চাঁদাবাজি, গ্রেফতার ৪
আবুল কালাম আজাদ, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ত্রিশালে ফেসবুক পরিচয়ের সূত্র ধরে এক চিকিৎসককে কৌশলে আটকে রেখে মারধর, ভয়ভীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে নারীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ইতোমধ্যে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাদী ডা. শফিকুল ইসলাম (৪৩) শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচএন্ডএফপিও। গত ১৬ নভেম্বর ‘জুই চৌধুরী’ নামের একটি ফেক ফেসবুক আইডির মাধ্যমে ৫ নম্বর আসামি তানিয়া আক্তারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। নিয়মিত কথোপকথনের একপর্যায়ে তানিয়া তাকে ত্রিশালে দেখা করার প্রস্তাব দেন।
বুধবার ১৯ নভেম্বর ২০২৫ বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে ডাক্তার শফিকুল ত্রিশালে পৌঁছালে ৬ নম্বর আসামি সিয়াম তাকে বাসস্ট্যান্ড থেকে রিসিভ করে পৌরসভার উজানপাড়া এলাকার একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। সেখানে তানিয়ার কক্ষে কথা বলার সময় বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে ১ নম্বর আসামি রবিউল মোল্লা, ৮ নম্বর আসামি আবুল বাশার ও ৯ নম্বর আসামি ফরিদুল ইসলাম হঠাৎ ঢুকে পড়ে। এরপর পাশের কক্ষ থেকে সোনালী আক্তার, রাজনা আক্তার, রাবেয়া আক্তারসহ আরও কয়েকজন এসে ডাক্তারকে ঘিরে ফেলে।
পরিকল্পিতভাবে তারা ভুক্তভোগী চিকিৎসকের শরীরের পোশাক আংশিক খুলে দুই নারী আসামিকে পাশে বসিয়ে তার ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারণ করে। এরপর তাকে ১০ লাখ টাকা প্রদানের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয় এবং টাকা না দিলে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি ভুক্তভোগীর গলায় ছুরি ধরে ভয়ভীতি দেখানো হয়। জীবন বাঁচাতে ডাক্তার শফিকুল প্রথমে নিজের কাছে থাকা ২২,৫০০ টাকা আসামিদের হাতে তুলে দেন।
পরে আসামিরা তাকে বেধড়ক মারধর করে এবং বিকাশের বিভিন্ন নম্বরে ফোন করে আত্মীয়দের মাধ্যমে মোট ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাঠাতে বাধ্য করে। টাকা নেওয়ার পরও বিষয়টি কাউকে জানালে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। পরে তাকে ঘটনাস্থল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
রাতে ৯টার দিকে বিষয়টি ত্রিশাল থানা পুলিশকে জানান ভুক্তভোগী। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বীররামপুর এলাকার আমিরন বেগমের বাড়ি থেকে রবিউল, সোনালী, রাজনা ও আমিরনকে গ্রেফতার করে। সেখান থেকে আমিরনের ব্যাগে পাওয়া বিকাশে তোলা ৫৬,৮৫০ টাকা এবং চাঁদাবাজিতে ব্যবহৃত ৬টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
পরে আহত ডাক্তার শফিকুলকে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং তিনি থানায় গিয়ে মামলাটি দায়ের করেন। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে ত্রিশাল থানা পুলিশ।