
বেঙ্গল প্রভিনসিয়াল ব্যাংকস কন্টাক্ট এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের ৪র্থ তম সম্মেলন ও প্রকাশ্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো।
রিপোর্টার, সমরেশ রায় ও শম্পা দাস , কলকাতা:
আজ ৮ ই নভেম্বর শনিবার, দুপুর দুটোয়, রানী রাসমণি রোডের সংযোগস্থলে, বেঙ্গল প্রভিনসিয়াল ব্যাংকস কন্টাক্ট এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে, একটি সুন্দর বাইক র্যালির মধ্য দিয়ে, চতুর্থ তম সম্মেলন ও প্রকাশ্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো।
চতুর্থ সম্মেলন ও প্রকাশ্য সমাবেশের উদ্বোধন করলেন কমরেড কমল ভট্টাচার্য- বিপিবিইএ এর চেয়ারম্যান।
এরপর একে একে উপস্থিত কমরেডদের মঞ্চে ডেকে নেন, এবং তাহাদেরকে মঞ্চে উত্তরীয় , ব্যাচ ও পুষ্পস্তবক দিয়ে সম্মানিত করেন।
উপস্থিত ছিলেন বিপিবিই এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সেক্রেটারী রাজেন নাগর, জেনারেল সেক্রেটারী শাহাবুদ্দীন সাহেব, ব্যাংক মিত্র সংগঠনের চেয়ারম্যান সঞ্জিত চ্যাটার্জি, উদ্বোধক কমল ভট্টাচার্য্য, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মহম্মদ শাহাউদ্দিন, সভাপতি কমরেড দুর্গাশ্রী, উপস্থিত ছিলেন কমরেড সোনালী, কমরেড তপন ভট্টাচার্য , কমরেড বিপ্লব ভট্ট, কমরেড শ্রীকৃষ্ণ সহ অন্যান্যরা।
সভা শুরুর আগে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের এমপ্লয়িজরা বাইক র্যালি ও পদযাত্রার মধ্য দিয়ে ও স্লোগানের মাধ্যমে সমাবেশে প্রবেশ করেন। আজকের এই সমাবেশের সামনে একটি হেলথ চেকআপ ক্যাম্পেরও ব্যবস্থা রাখা হয়।
এই সংগঠনটি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পাবলিক সেক্টর, প্রাইভেট সেক্টর, আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংক ,স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া , রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ও কো-অপারেটিভ ব্যাংকের কর্মরত চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের সর্ববৃহৎ ট্রেড ইউনিয়ন ।
মঞ্চে দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কমরেডরা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের উল্লেখিত নীতি ও পদক্ষেপ এবং সিদ্ধান্তকে আমরা কখনোই মানবো না, তাই তিনি বলেন সম্মিলিত শ্রমিক কর্মচারী, কৃষিজিবী এবং আপামর জনসাধারণ আন্দোলন ও সচেতনতার মধ্য দিয়ে সরকারকে তার দেশ এবং জনগণের স্বার্থ বিরোধী কাজ থেকে বিরত রাখতে, লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে অধিকার ছিনিয়ে আনতে পারে, আমাদের প্রিয় দেশ আজ এক গুরুত্বপূর্ণ জটিল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে সরকারের বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই দেশের ও শ্রমজীবী, চাকুরীজীবি, দৈনন্দিন খেটে খাওয়া মানুষ এবং বেকার শিক্ষিত যুবক ও যুবতীদের স্বার্থ বিরোধী কার্যক্রম। তারা অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের মন্তব্য খুবই দুঃখজনক বলে তুলে ধরেন, ব্যাঙ রাষ্ট্রীয়করণ প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, লঞ্চে দাঁড়িয়ে কমরেড একে একে স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৬৯ সালে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী যখন ১৪ টি ব্যাংক জাতীয়করণ করেন, তখন থেকেই দেশের শিল্প ,কৃষি, শিক্ষা ,স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, প্রতিরক্ষার আর্থিক কাঠামোতে উন্নয়নের যুগ শুরু হয়। এই রাষ্ট্রায়ত ব্যাংকগুলি কৃষকদের ছোট ছোট শিল্প গোষ্ঠী, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প ,বেকার সমস্যা দূরীকরণ এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে ঋণ দিয়ে থাকেন। অপরদিকে প্রাইভেট এবং বিদেশি বেঙ্গলি কেবলমাত্র বিত্তবানদের ঋণ দিয়ে থাকেন বলে জানান। তাহারা আরো বলেন বর্তমান সরকারের ব্যাংক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির নীতির কারণে, আজ দেশের আর্থিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। এর সাথে সাথে আরো বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের কোটি কোটি অনাদায় ঋণ খেলাপিদের টাকা আদায় না করে বা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে, ব্যাংকের লোভ্যাংশ থেকে সেগুলি মুকুব করে ,ব্যাংকের উপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন।, ব্যাংকের আমানতের সুদের হার ক্রমাগত কমছে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, ছোট বড় শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ছে, স্থায়ী নিয়োগ ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ছে।
সরকার বিভিন্ন দপ্তরে ব্যাংক, রেল ,বীমা ,শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা বিভাগে লক্ষাধিক শূন্য পদ স্থায়ী কর্মী নিয়োগ দ্বারা পূরণ না করে, চুক্তিভিত্তিক ও আউটসোর্স কর্ম সংস্থান বাড়াচ্ছে , যেখানে কোন সুরক্ষা বা ভবিষ্যৎ নিশ্চিত নয়। শুধু ধর্মের নামে জনগণকে বিভক্ত করা হচ্ছে, যার ফলে দেশের সাম্প্রতিক সম্মতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নিরীহ মানুষদের মিথ্যা অভিযোগে হত্যা করা ও হয়রানি করা হচ্ছে, যা দেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের কাছে গভীর উদ্যোগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাই আমাদের দাবী সমূহ গুলি হল……শ্রমিক বিরোধী নতুন শ্রম আইন প্রত্যাহার করতে হবে।
নতুন কৃষি আইন সংশোধন ও সংস্কার কৃষক সার্থে করতে হবে।
সরকারি ব্যাংকগুলি বেসরকারিকরণ এবং বিদেশীকরণ চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে।
সকল বিদেশি ও প্রাইভেট ব্যাংক জাতীয়করণ করতে হবে।
ব্যাংকের সমস্ত শূন্য পদ স্থায়ী কর্মী দ্বারা পূরণ করতে হবে।
চুক্তিভিত্তিক ও ব্যাংক মিত্র কর্মীদের স্থায়ী পদে নিয়োগ করতে হবে।
গ্রাহকদের উপর ব্যাংক সার্ভিস চার্জ সকল ক্ষেত্রে বন্ধ করতে হবে।
বেতন কোড বাতিল করে, সকল চুক্তিভিত্তিক ব্যাংক কর্মীর জন্য কেন্দ্রীয় মজুরি চালু করতে হবে।
প্রতি ব্যাংকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচলিত বেতন দিতে হবে।
সকল অসংগঠিত শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য নূন্যতম ৭০০০ টাকা পেনশন চালু করতে হবে।
সর্বশেষে তারা বলেন , যতদিন না এই দাবীগুলি আমাদের পূরণ না হচ্ছে, আমাদের এই আন্দোলন থামবে না। আগামী দিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামবো।