পটিয়ার রাজনীতিতে শিষ্টাচার সহনশীলতা শ্রদ্ধাবোধ ও নিজ দলের নেত্রীরকে অনুসরণ করা জরুরী
মোঃ হাসানুর জামান বাবু।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া।এই পটিয়ার রাজনীতিতে যেমন রয়েছে সুদীর্ঘ গৌরবময় ইতিহাস তেমনি রয়েছে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৯,৭১,৯০, ৯৬ সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল অংশগ্রহণ ও বিজয়ের হাসি মাখা ইতিহাস। যা নিয়ে পটিয়াবাসী চট্টগ্রামের অন্যান্য উপজেলা পৌরসভা ও নির্বাচনী এলাকার জনগণের চেয়ে বেশি গর্ববোধ করেন এবং নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ইতিহাস লেখেন। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে সেই শান্তির ঐক্যের সম্প্রীতির ভাতৃত্ববোধের পটিয়ায় রাজনীতির নামে কিছু কিছু ঘটনা রটনা ঐতিহ্যবাহী পটিয়ার গৌরব সম্মান গৌরবজ্জোল ইতিহাসকে ম্লান করে দিচ্ছে বিধায় ভারাক্রান্ত মনে কলম ধরতে বাধ্য হলাম। রাজনীতিতে শিষ্টাচার সহনশীলতাও শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে -
রাজনীতি কেবল দল বা ক্ষমতার লড়াই নয়। এটি আচরণ, শিষ্টাচার এবং নৈতিকতার প্রতিফলন। রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে মানুষ মোটাদাগে কী চায়? প্রকৃত অর্থে তারা মূলত চায় সততা, সহনশীলতা ও দায়িত্বশীলতা। বাংলাদেশের শীর্ষ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও পলাতক পতিতস্বৈরাচারী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আচরণ যদি এই মানদণ্ডে মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে ভিন্ন দুই ধারা চোখে পড়ে। বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে দীর্ঘ পথ হাঁটছেন। অসংখ্যবার তিনি নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তবুও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অশালীন ভাষা ব্যবহার করেননি। গত বছরের ৫ আগস্ট মুক্তির পরও একটি বারের জন্য শেখ হাসিনার নাম উচ্চারণ না করে, রাজনৈতিক সৌজন্যতা বজায় রেখেছেন। তার শিষ্টাচার, ধৈর্য ও সহনশীলতা অনেকের কাছে এখনো রাজনৈতিক শালীনতার উদাহরণ।
অন্যদিকে, পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রায়ই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে উদ্দেশ্য করে এমন ভাষা ব্যবহার করেছেন, যা একজন রাষ্ট্রনায়কের কাছ থেকে অনাকাক্সিক্ষত। ড. ইউনূস কিংবা খালেদা জিয়ার মতো বরেণ্য ব্যক্তিদের ‘পানিতে চুবানো’ বা ছাত্রদের ‘রাজাকার’ বলা এসব বক্তব্য রাজনৈতিক পরিবেশকে উত্তপ্ত ও বিভাজিত করেছে বিধায় একটা সময়ে শেখ হাসিনাকে স্বদলবলে পালাতে হয়েছে । এমনকি এখনো ভারতে থেকে তিনি যেভাবে কথা বলছেন, তা কোনোভাবেই নেতৃত্বসুলভ নয়। ক্ষমতায় থাকা মানেই আরও সংযত থাকা। কারণ শীর্ষ নেতৃত্বের আচরণেই রাজনীতির ভাষা নির্ধারিত হয়। মতের ভিন্নতা গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য তা সহ্য করতে না পারলে সমাজে উগ্রতা বাড়ে, বিভাজন তৈরি হয়। আজকের তরুণদের সামনে দুটি পথ একটি সংযম, শিষ্টাচার ও উদারতার; অন্যটি অহংকার, প্রতিহিংসা ও তাচ্ছিল্যের। তারা যাকে অনুসরণ করবে, ভবিষ্যতের বাংলাদেশ তেমনই হবে। নেতৃত্ব যদি প্রতিপক্ষকে শত্রু মনে করে, তবে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু নেতৃত্ব যদি সৌজন্যতাবোধ শ্রদ্ধাবোধের ভাষা চেনে, তবে জাতি এগিয়ে যায়।এতো লম্বা উদাহরণ দেওয়ার কারণ চট্টগ্রাম পটিয়া নির্বাচনী এলাকার বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটকে চিহ্নিত করার জন্য এবং নেতৃত্বের কথাবার্তা ভাষা রাজনৈতিক সৌজন্যতাবোধ শ্রদ্ধাবোধ সহমর্মিতা দেখিয়ে উগ্রতা লাগামহীন কথাবার্তা নিয়ন্ত্রিত করে আচার আচরণ কথাবার্তা বলার অনুরোধ করার জন্য।
রাজনীতি মানুষকে বিভক্ত করার নয়, ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যম হওয়া উচিত। সেই নেতৃত্বই কাম্য, যারা মতবিরোধ সত্ত্বেও সম্মান দেখাতে জানেন। আমরা এমন এক নেতৃত্ব চাই, যারা জাতিকে সামনে এগিয়ে নিতে পারবে। সেখানে অহংকার নয়, থাকতে হবে বিনয়। কোনো প্রতিহিংসা নয়, সহমর্মিতা প্রকাশ করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের প্রধান সারির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এই বিষয়টি ভুলে যান। অতীত ঘাঁটলে যার ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা যে নিষিদ্ধ দলের নেতৃত্ব রয়েছেন, সেখানে অজস্র প্রমাণ রয়েছে। রাজনীতি হচ্ছে, নীতির রাজা। ষাট-সত্তর দশকের রাজনীতি এখন চলবে না,চলবে না নব্বই দশকের লাঠি শোটি নিয়ে রাজপথ কলেজ ক্যাম্পাস ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে দখল করার রাজনীতি এখন চলবে না,এগুলো এখন কেবলই অতীত,এখন প্রযুক্তির ও বুদ্ধিমত্তার যুগ । তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আর ২০২৫ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এক হবে না। দীর্ঘ সময়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। দেশের পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ফলে এই মুহূর্তে এসে, শুধু হুংকার শুনিয়ে পেশি শক্তি সামর্থ্য প্রদর্শন করে রাজনীতি হবে না। এর জন্য প্রয়োজন বাস্তবসম্মত নীতি, কৌশল এবং জনবান্ধবমূলক কর্মসূচি। আমাদের দেশের নিম্নবিত্ত মানুষ বেশি কিছু চায় না। এরাই জনস্যংখার দিক থেকে বেশি। তাদের চাওয়া সরাসরি, পরিষ্কার। তারা তিনবেলা খাবার, পরনে কাপড় আর একটু নিরাপদ বাসস্থান হলেই খুশি। এদের সবাই পরিশ্রমী। তারা কাজ চায়। বিনিময়ে শুধু বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা। এই চাওয়াটুকু পূরণ করার মিথ্যে প্রতিশ্রুতিতে আমরা তাদের ব্যবহার করি। উদ্ধার করি নিজের স্বার্থ। এই কাজটি সুনিপুণভাবে করেছেন বিগত সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।বর্তমান সময়ে এসে আমরা যদি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের পথেই হাঁটি তাহলে আমাদের আর তফাৎ টা কোন জায়গায়??শেখ হাসিনা দেশের মানুষের পেশি শক্তির জোরে এবং বিভিন্ন কৌশলে দেশের সম্মান জনক বাহিনী গুলোকে ব্যবহার করে সাধারণ জনগণকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে টুটি চেপে ধরে যে কিছু আদায় করে নিতেন বলেই, ফলে তিনি আজ নিন্দিত, নির্বাসিত এবং দেশবাসীর ভালোবাসা থেকে প্রত্যাখ্যাত। বিপরীতে খালেদা জিয়ার কথায় আসি।
তিনি স্বামী-পুত্র হারিয়ে আজও শক্ত হাতে জনসমর্থিত বিশাল একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছেন। একমাত্র বেঁচে থাকা পুত্র তারেক জিয়া এবং দেশবাসীর দিকে তাকিয়ে এই বয়সেও মনোবল হারাননি। উপরন্তু বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন চলমান রাজনীতির গতি- প্রকৃতি নির্ধারণে। সেভাবেই বিএনপির রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে। এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার, খেয়াল করুন খালেদা জিয়া আজ পর্যন্ত এমন কোনো কাজ করেননি, যাতে শহীদ জিয়াউর রহমান একবারের জন্যও কলঙ্কিত হন। তিনিও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে ছিলেন ৩ বার। উল্টোদিকে, শেখ হাসিনা তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ইতিহাসের পাতা থেকে নির্বাসনে পাঠিয়েছেন। প্রতি মুহূর্তে সর্বত্র তার অবদান, কীর্তি, স্বপ্ন এবং দক্ষতার স্তুতি করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হয়েছে, সবাই জানি। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি এভাবেই আবর্তিত হব, নাকি পরিবর্তন আসন্ন!তাহলে আমার যারা চট্টগ্রাম পটিয়া বিএনপির কর্মী সমর্থক হিসেবে পরিচিত! আমরা কেন এখনো আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার আদর্শ নীতি অনুসরণ করে ধৈর্য্য ধারণ সহনশীলতা শ্রদ্ধাবোধ সহমর্মিতা দেখিয়ে উগ্রতা লাগামহীন কথাবার্তা পরিহার করতে পারছি না?
এবার একটু ভবিষ্যতের কথা বলি। সব মানুষের সঙ্গে এই চিন্তার সম্মিলন হবে, এমনটা নয়। তবে দেশের অধিকাংশ মানুষ যদি গভীরভাবে চিন্তা করেন, তাহলে হয়তো সামঞ্জস্য পেতেও পারেন। যে রাজনৈতিক আদর্শ লালন করেন না কেন, আপনাকে একটি বিষয় মাথায় রাখতেই হবে। বিশ্বাস করতে হবে, বোধে থাকতে হবে দেশপ্রেম। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা না থাকলে, জনগণের প্রতি মানবিকতা প্রদর্শন করতে না পারলে, কোনোভাবেই আপনার রাজনীতি জনগ্রাহ্য হবে না। বিশেষ করে, দীর্ঘমেয়াদি প্রশ্নে। বাংলা ভাষা, বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি দায়বদ্ধতা এবং জন্মভূমির প্রতি নিজেকে উৎসর্গ করার মানসিকতা না থাকলে, রাজনীতির নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। রাজনীতিতে তারাই টিকে থাকবে, যারা ঐ বিষয়গুলো সবসময় চিন্তা-চেতনায় জাগ্রত রাখেন। দলের নীতি আদর্শ গঠনতন্ত্র বাদ দিয়ে, নেত্রীর নির্দেশ আদেশ নেত্রীর ভদ্রনম্র আচরন অনুসরন না করে এলাকা ভিত্তিক একজন নেতার আসক্ত হয়ে উগ্রতা লাগামহীন কথাবার্তা পরিহার না হলে, রাজনীতির নামে প্রতারণার দুয়ার একদিন উন্মোচিত হবে।তবে একটি কথা সত্য যে, দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন আসবে, আসতেই হবে সেটি খালেদা জিয়া বা তারেক জিয়ার হাত ধরেই। যার ছায়া এরই মধ্যে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
লেখক : মিডিয়া কর্মী ক্রীড়া সংগঠক।